ইমাউল হক ::
জীবন পুড়েছে রাইফেল এ,সম্ভ্রম গেছে বর্বরতার কাছে, ঘর পুড়ল আগুনে।
কলমে কালি নেই বলে লিখছে না এটা যেমন সত্য ঠিক কপালে জায়গা যে শেষ এটাও সত্য!মানুষ কলম দিয়ে কাগজে লেখে।আর তাদের রাইফেল দিয়ে কপালে লেখা হয়েছে।সে লেখা দেখে কেউ তাকায় না।শুধুই রোহিঙ্গা বলে!শত বার ,বার বার জ্বলে পুড়ে ছাই জীবন, জীবনের প্রান,প্রানের জান!
রাইফেল আর দাপটের শক্তিতে রাষ্ট্র হতে বিতাড়িত হয়ে শেষ রক্ষা হয়নি, অতিরিক্ত দিতে হয়েছে ইজ্জত। লজ্জ ,সম্মান, মান,সম্ভ্রম নিয়ে শোচনীয় ভাবে পরাজয় হতে হয়েছে বর্বরতার কাছে।
সব হারিয়ে, সর্বহারা হয়ে মানবতার নেত্রী ,মহিয়সী ,মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ের কারণে যার পরনায় ছোট শিশুর কাছে পিতার, স্ত্রীর কাছে স্বামীর, একে অপরের মুখ কিছুটা হলেও রক্ষা। তাবু হোক,পলিথিন হোক, অন্তত বাসস্থান পেয়েছে।
খাবার দেয় বিভিন্ন সংস্থা।কাজ নেই, কর্ম নেই।ঘুরে ফিরে সময় কাটে ।সে বসা বা শোয়ার ঘরে সদস্য তো চারের নীচে নয় কোন কোন ক্ষেত্রে আট সদস্য।
এর নাম ও জীবন, এটাও বসবাস, এ যাত্রার নামও জীবন যাত্রা।বিশ্ব নাগরিকদের কাছে উপহাস।
তবুও শান্ত্বনা থাকতে পারছে চক্ষু মেলিয়া দুনয়নে,,
সেটা চলছিল, চলমান থাকলেও দিন যেত। কিন্ত ভাগ্যে সহায় হয়নি হতভাগা মানব বংশধর দের ।কোন করুনা, দয়া মায়া কাজ করে নাই।একে বারে সোজাসুজি চেয়ে নেওয়া আশ্রয় স্থানে দানে পাওয়া ঘর, পলিথিনে তৈরী, বাঁশের ঘর যে আগুনে পুড়ে তাসের ঘর হয়ে গেল!অনলে যে পুড়ে গেল। সত্যিই লাখ লাখ চোখের সামনে পুড়ে ছাই!
ভাগ্য আর কপাল কত টুকু পরিহাসের হলে পলিথিনের ঘর পুড়ে গেল, সেটা নেভানোর পানি পাওয়া গেল না।কতটা নির্ধারিত ভবিষ্যত হলে ফায়ার সার্ভিস প্রবেশের রাস্তা থাকে না।কতটা অশ্রু বরনের ক্ষমতা থাকলে চেয়ে চেয়ে দেখতে হল দানে পাওয়া পলিথিনের ঘর পোড়া ছাই!
যার রাষ্ট্র নাই, সম্মান হারা তার আবার ঘর আগুনে পুড়লেই কি বা পাহাড়ের নীচে পড়লেই কি?
অথচ আমাদের মতই তারা মানুষ!হাসে,কান্দে!ঘুমায়, খায়,চিন্তা করে,আবেগ বিবেক সবই আছে।
অনেকের ই ঘর ছিল, মাতবারি ছিল,পদ পজিপন ছিল।অনেকেই এম ছিল,চেয়ারম্যান ছিল,অফিসার ছিল!!
অনেকের কলম ছিল, অফিস ছিল পাতা পাতা লেখা ছিল।
কিন্ত আজ চাকরি নেই ,মাতবারি নেই, বিচার করা দূরে থাক প্রকৃতির বিচারে চাতকের মত চেয়ে চেয়ে দেখতে হল ,শেষ সম্বল পুড়ে যাওয়ার দৃশ্য!
রাতে ঘুমাতে হচ্ছে আকাশের নীচে,পোড়া গন্ধের বাতাসে ।
বিকারের বিকার গ্রস্থ!নিজের কাছে বড় অসহায় তারা,কপালের কাছে বাস্তবতার উপহাস ,ভাগ্যের কাছে দফায় দফায় পরাজয়ের পরিহাস!
দুই বছর হল দেখে আসছি!তারা সত্যিই মায়ানমার যেতে চায়,কাজ করতে চায়, রাষ্ট্র পেতে চায়,সন্তান কে লেখা পড়া করাতে চায়, নিজে কাজ করে খেতে চায়।
কিন্ত বার বার চোখের সামনেই সব পুড়ে যায়!কি করবে তারা ,দেখতে দেখতে ভাবনা এসে যায়। হাজার হলেও মানুষ তো!
এ আগুন ই যেন শেষ অনল হয়।মায়ানমার যেন তাদের গন্তব্য হয়।এ ছাই চাপা আগুন যেন মায়ানমার যাওয়ার স্ফুলিংগের তেজরস্মি হয়।
লেখক -ইমাউল হক
রোহিঙ্গার ইন্টেলিজেন্স এন্ড মিডিয়া সেল
১৪ এপিবিএন কক্সবাজার
পাঠকের মতামত